
দাখিল ৯ম ১০ম শ্রেণীর ফিকহ ও উসূলুল ফিকহ (নামাজ পর্ব, كتاب الصلاه) গাইড পিডিএফ-Dakhil 9-10 Fiqh and Usulul Fiqh(Namaj Porbo)guide PDF
নামাজ পর্ব (كتاب الصلاة)
নামাজের সংজ্ঞা
নামাজ (আরবি: صلاة, সালাহ) ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ। নামাজ হলো নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের একটি ধর্মীয় কাজ। এটি একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নামাজ ফরজ হওয়ার শর্ত
- ইসলাম: নামাজ কেবল মুসলিমদের ওপর ফরজ।
- বয়স: প্রাপ্তবয়স্কদের (বালিগ) উপর নামাজ ফরজ।
- শুদ্ধতা: নামাজে দাঁড়ানোর আগে ব্যক্তির শরীর, পোশাক ও স্থান পবিত্র হতে হবে (অর্থাৎ, অযু করা এবং কাপড় পরিস্কার রাখা)।
- নিয়ত: নামাজের জন্য সঠিক নিয়ত থাকতে হবে।
নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব
নামাজের কিছু স্তর আছে যা বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের অনুযায়ী শর্তাবলী পালন করতে হয়:
- ফরজ: নামাজের ফরজ অংশ হলো পবিত্রতা অর্জন (অযু), কিবলা মুখী হওয়া, এবং নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা।
- ওয়াজিব: নামাজের কিছু ওয়াজিব অংশ আছে, যেমন সূরা ফাতিহা (সর্বত্র নামাজের মধ্যে) পাঠ করা, কিন্তু যদি ভুলে না পড়া হয় তবে এটি সিজদায় সাহু দ্বারা সংশোধন করা যায়।
- সুন্নত: কিছু নামাজের জন্য সুন্নত রয়েছে, যেমন ফজরের নামাজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত, যোহরের নামাজের পর এবং মাগরিবের পর কিছু সুন্নত রয়েছে।
- মুস্তাহাব: নামাজের কিছু ঐচ্ছিক অংশ (মুস্তাহাব) রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করা।
নামাজের সময়সমূহ
- ফজর: সকালবেলা, সূর্যোদয়ের আগে। দুই রাকাত সুন্নত + দুই রাকাত ফরজ।
- যোহর: দুপুরের সময়, সূর্য মধ্যাকাশে পৌঁছানোর পর। চার রাকাত সুন্নত + চার রাকাত ফরজ + দুই রাকাত সুন্নত।
- আসর: বিকেলের সময়, সূর্য পশ্চিমে ঝুঁকতে শুরু করার পর। চার রাকাত ফরজ।
- মাগরিব: সূর্যাস্তের পর, সন্ধ্যার পূর্বে। তিন রাকাত ফরজ + দুই রাকাত সুন্নত।
- ইশা: রাতের সময়, অন্ধকার হতে শুরু করার পর। চার রাকাত ফরজ + দুই রাকাত সুন্নত।
নামাজের প্রকার
- ফরজ নামাজ: যা দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফরজ।
- সুন্নত নামাজ: যে নামাজগুলো রাসুল (ﷺ) নিয়মিত আদায় করেছেন, এবং তা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অধিক গুরুত্ব বহন করে।
- নফল নামাজ: অতিরিক্ত আদায় করা যায়, তবে এটি ফরজ নয়। যেমন তাসবিহ নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ ইত্যাদি।
- ঐচ্ছিক নামাজ: এই নামাজ গুলি নিয়মিত নয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে আদায় করা হয়। যেমন, বিদায়ী নামাজ, শফা নামাজ ইত্যাদি।
নামাজের উপকারিতা
- আত্মশুদ্ধি: নামাজ মুসলিমদের আত্মা, মন ও হৃদয়কে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা করে।
- শান্তি ও প্রশান্তি: নামাজ একজন মুসলিমের মনকে শান্তি প্রদান করে, বিশেষ করে দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।
- আত্মসমর্পণ: নামাজ মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং সমর্পণের চেতনা সৃষ্টি করে।
- সমাজে সমতা: নামাজ মুসলিমদের মধ্যে সাম্যের ধারণা সৃষ্টি করে, কারণ সব মুসলিম একত্রিত হয়ে একই সময়ে একেই আযান ও কিবলা দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে।
- অন্যায় থেকে বিরত থাকা: নিয়মিত নামাজের মাধ্যমে মানুষ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে এবং সৎ পথে চলার প্রেরণা পায়।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
"নামাজ ধর্মের মেরুদণ্ড। যদি তা ভালোভাবে করা হয়, তবে সমস্ত কর্ম ভালো হয়। আর যদি তা খারাপ হয়ে যায়, তবে সমস্ত কর্ম খারাপ হয়ে যায়।"– সহিহ মুসলিম: ২৫৯
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"প্রত্যেকটি মুসলিমের উপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে। যদি তারা সঠিকভাবে নামাজ আদায় না করে, তবে তাদের প্রতি কোনো অন্যায় নয়, তবে আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন।"– সূরা আল-বাকারা: ১১৮