জুমাবার কে কেন জুমাবারে নামকরণ করেছেন?

Sayemul Kabir
0
Join Telegram for More Books
পূর্ব কথাঃ জুমার দিন সপ্তাহের শেষ দিন। মহান আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর এই দিনটিকে মানবজাতীর সপ্তাহিক সমাবেশ ও ঈদের জন্য বাছাই করেছিলেন আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু পূর্ববর্তী জাতীরা দিনটিকে যথাযথ সম্মান করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদীরা খেয়াল খুশীমত শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে নেয় এবং খৃষ্টানরা গ্রহণ করে রবিবারকে। আল্লাহ পাক এই উম্মতকেই তওফীক দিয়েছেন যে, তারা জুমুয়াবারকে মনোনীত করেছে। (ইবনে কাছীর)

নামকরণ:

ইসলাম পূর্বযুগে আরব দেশে এই দিনকে “ইয়াওমে আরুবা” বলা হয়। যার অর্থ রহমতের দিন। আল্লামা ইবনে হাযম (রহঃ) এত সুন্দর অর্থ পূর্ণ নাম দেখে মনে করেন, এটা সম্পূর্ণ ইসলামী নাম। সুতরাং মনে হয় ইসলামের যুগেই এই নাম রাখা হয়। কিন্তু গবেষক ঐতিহাসিকগণ বলেন-আইয়্যামে জাহেলিয়াতে অনেক পূর্ব থেকেই এই নাম ছিল। বরং এই নাম পরিবর্তন করে ইয়াওমুল জুমুআ তথা জুমুআর দিন রাখা হয়েছে ইসলামের আগে। রাসুল (সঃ) এর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কোরায়শ বংশে কা'ব বিন লুয়াই নামে একজন মহা সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জীবনে কখনো মূর্তি পূজা করেননি। ধর্মীয় মহান ব্যক্তি হিসেবে সম্মান করা হত। এমনকি রাসুল (সঃ) এর নুবুয়ত লাভের পাঁচশ ষাট বছর পূর্বে তিনি মৃতুবরণ করলে তাঁর মৃত্যুর বছর থেকে আরবরা বছর গণনা শুরু করে। এই মহা পুরুষই সর্ব প্রথম এই দিনকে 'ইয়াওমে জুমুআ' তথা জুমুআর দিন রাখেন। তিনি রাসুল (সঃ) এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। (মাযহারী, عمدة القارى ৬/১৬১)

নাম করণের কারণঃ

جمعةশব্দের অর্থ একত্রিত করণ। يوم الجمعة অর্থ একত্রিত করনের দিন। এই নামে কেন দিনটির নাম রাখা হয় তা নির্ণয়ে বর্ণনাকারীদের বক্তব্য বিভিন্ন রকম পাওয়া যায়। (১) আল্লাহ তায়ালা নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও সমস্ত জগতকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুমুআর দিন। তথা সৃষ্টির পূর্ণতা এই দিনে হয়েছিল বলেই এই দিনকে এই নামে নাম করণ করা হয়। (২) অনেকের ধারণা এই যে, রাসুল (সঃ) মক্কা শরীফ থেকে মদীনায় আগমনের পূর্বেই হযরত আসাদ বিন যরারাহ মদীনা শরীফে মুসলমানদের একত্রিত করে এই দিনে নামায পড়া আরম্ভ করে দেন। এই জন্য আনসারীগণ এইদিনকে يوم الجمعة বলতে থাকেন। (৩) অনেকের মন্তব্য হল-রাসুল (সঃ) আগমনের পূর্বে মক্কার হারাম শরীফে কা'ব বিন লুয়াই মানুষদের জমা করে এই দিনে ওয়াজ করতেন এবং শেষনবী (সঃ) এর আগমন নিকটবর্তী হওয়ার সুসংবাদ দিতেন। এই জন্য এই দিন জুমু আর দিন হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। অন্যান্য কিছু বর্ণনায় কা'ব বিন নূয়াই এর স্থলে কুসাই ইনে কেলাবের কথা আছে। হতে পারে দু'জনেই এভাবে সমাবেশ করতেন। (৪) অনেকে মন্তব্য করেন-আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ) দীর্ঘদিন পর আরফাতের ময়দানে এই দিনে একত্রিত হয়েছিলেন। এজন্য এই দিনকে يوم الجمعة বলা হয়। (৫) অথবা দুনিয়ার সৃষ্টির পূর্ণতা যেমন এই দিনে সমাপ্ত হয় তেমনি এদিনেই কিয়ামতের ফুৎকার দিলে বনের পশুরা পর্যন্ত মানুষের সাথে একত্রিত হয়ে যাবে )واذا الوحوش حشرت আল-কোরআন তাই এই নামে নাম করণ করা হয়েছে। (৬) একটি প্রসিদ্ধ এবং অধিকাংশ কিতাবে এই রেওয়াতেটি আছে যে, এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টির উপাদান ও সামগ্রী একত্রিত করেন বলে এই নামে নাম করণ করা হয়। অনেকে এই রেওয়ায়েতকে দুর্বল বললেও হাফেজ ইবনে হাজর আসকলানী (রহঃ) হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) হতে ইবনে আবি হাতেমের রেওয়ায়েত উল্লেখ করে বলেন - هذا اصح الاقوال তথা এটাই সবচয়ে শুদ্ধ কথা । ۳۰۳/۲۔ فتح البارআসল কথা আল্লাহ পাক ভাল জানেন। جمعة শব্দের উচ্চারণ ও বিভিন্ন ধরণঃ جمعة শব্দের উচ্চারণ কি রকম হবে তাতে অভিধান বিষারদগণের মধ্যে চার ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়। (১) ৫ এবং পেশ দিয়ে পড়া হবে। (২) এর মধ্যে পেশ এর? উভয় অক্ষরে এর মধ্যে সাকিন দিয়ে। (৩) এর মধ্যে পেশ এবং এর মধ্যে যবর দিয়ে। (৪) ৫ এর মধ্যে পেশ এবং এর নিচে যের দিয়ে। নাহুবিদ জুযাজের মতে ইহা সুন্দর তবে প্রসিদ্ধ হল প্রথম কেরাতটি। এ কেরাত মতেই কোরআন শরীফ পড়া হয়। وهو الافصح والأكثر وفيه قرأ الجمهور روح المعاني 99/28 سورة جمعة

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!